Sunday, September 22, 2013

জোর করে বিয়ে দেয়া এবং...

কিছুক্ষণ আগে একটা ঘটনা শুনলাম, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন এক বড় ভাই এর। ঊনি গ্রামের ছেলে, যখন স্কুলে পড়তেন তখন একটা মেয়েকে খুব পছন্দ করতেন এবং একটা সময় গিয়ে মেয়েটির সাথে সম্পর্ক হলো, সেই সম্পর্কটি ৪ বছর যখন পেরোলো, তখন ঊনারা ইন্টারে পড়েন।

হঠাৎ মেয়েটির বিয়ে নিয়ে তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়, ঊনি সেই সময় নামাজ পড়া শুরু করে দেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ছাড়াও অনেক ধরনের নফল নামাজ পড়া শুরু করেন। আনুষ্ঠানিকভাবে মেয়েটির পরিবারে বিয়ের প্রস্তাবও পাঠালেন, কিন্তু ওরা না করে দিল কারণ ছেলে বেকার।

অন্যদিকে মেয়েটি তার পরিবারকে হাজারবার না করার পরেও তাকে তার মা- বাবা আর ভাইরা জোর করে মিলে সেই গ্রামেরই আরেক ছেলের কাছে বিয়ে দিলো, যে তখন একটা মুদি দোকান চালাতো। পরে যা হলো, তার জন্য ঊনি প্রস্তুত ছিলেন না, মেয়েটি বাসর রাতেই আত্নহত্যা করে বসলো। হয়তো মেয়েটির কাছে অজানা সেই পুরুষের ছোঁয়া ধর্ষকের মতো লেগেছিল।

সেই বড় ভাইটি এখন একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে চাকুরি করছেন, কথা প্রসঙ্গে আজ ঊনার এই কথা চলে এলো, ঘটনাটা বলতে গিয়েই ঊনি কেঁদে দিলেন। ঊনি এখন প্রায় মধ্যবয়সী, এখনো বিয়ে করেন নি, বলে গেলেন সামনেও কখনো বিয়ে করবেন না- এটা ঊনার নিজের প্রতিজ্ঞা। সাথে এও জানালেন যে ঊনি সেই ইন্টার থেকেই আর কোন ধর্মেই বিশ্বাস করেন না এবং ঊনি নিজেকে একজন শুধুই জৈবিক মেশিন মনে করেন, বেঁচে থাকার জন্য বেঁচে আছেন, আর একদিন ধূপ করে ঊনার জীবন প্রদীপ নিভে গেলে সব শেষ হয়ে যাবে।

উপরের এই ঘটনাটি পড়ে অনেকেই হা হুতাশ করবে, আর দোষ দিবে কেন মেয়েটি আত্নহত্যা করলো, কেন ছেলেটি আজ নাস্তিক হলো- তারাতো সারাজীবনের জন্য জাহান্নামি হয়ে গেলো। কিন্তু, কেউ কি একবার চিন্তা করেছেন যে, তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে কে ঠেলে দিয়েছে? তাদেরকে এই পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছে ঐ মেয়ের ম- বাবা- ভাইরা। ঊনারা স্পষ্টতই আল্লাহ্‌র নিয়ম ভঙ্গ করেছেন, কারণ সহীহ আল বুখারি এর বই নাম্বার ৬২ এর হাদীস নাম্বার ৬৭ এবং ৬৯ এ যা আছে, তার সারমর্ম হলো কোন মেয়েকে বা মহিলাকে জোর করে বিয়ে দিলে সেই বিয়ে অবৈধ হয়ে যায়, অর্থ্যাৎ আল্লাহ্‌ সেই বিয়ে গ্রহণই করেন না, এবং হাদীসদ্বয়ে দেখা যায় স্বয়ং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) নির্দেশ দিচ্ছেন যে ঊনার কাছে সুবিচার চাইতে আসা মেয়েটিকে যেন তার ইচ্ছা অনুযায়ি বিয়ে দেয়া হয়।

পরিষ্কারভাবেই এই বিধি সম্পূর্ণভাবে স্বল্পমেয়াদী শয়তানের দেখানো লালসায় পড়ে সেই মেয়ের মা- বাবা- ভাইয়েরা ঐ মুদি দোকানির সাথে বিয়ে দিয়েছিল মেয়েটার। অথচ ঐ মেয়েটি যে ছেলেকে ভালোবাসতো, সেই ছেলেটির আজ সৎ উপায়েই টাকার অভাবে নেই আর সামাজিক মর্যাদার কথা তো বাদই দিলাম।

আমাদের সমাজে ধরে নেয়া হয়, মা- বাবা কোন ভুল করতে পারেন না, তারা তাদের সন্তানের সাথে যা করেন, তাই-ই ঠিক। এটা একটা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ধারণা। কারণ, একজন মুসলিম ব্যাক্তি বিশ্বাস করতে বাধ্য যে মহান আল্লাহ্‌ সকল ভুল-ক্রুটি এর উর্ধ্বে আর মানব সভ্যতার ইতিহাসে একমাত্র হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) ছাড়া আর সবাই অবশ্যই প্রতিনিয়ত ভুল দ্বারা আক্রান্ত।

তাই, অবশ্যই মা- বাবা- ভাইয়ের যদিও উদ্দেশ্য থাকে তাদের মেয়ে- বোনের ভাল করার জন্য, কিন্তু যেহেতু তারাও মানুষ, তাই তারাও অবশ্যই শয়তানের প্ররোচনায় পড়ে ভুল সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য। এবং এ জন্যই এইসব সাময়িক অর্থের তারল্য দেখে এসব ধরনের মা- বাবা- ভাইয়ের মাথা ঘুরে যায়।

অথচ আমাদের বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে, বিশেষ করে মা- বাবাকে মানুষ তো দূরের কথা পারলে দেবতার আসনে বসিয়ে দেয় মানুষ।

যাই হোক, ঐ সিনিয়র ভাইটি আর ঊনার সেই ভালোবাসার মেয়েটির জন্য আমার খুব কষ্ট লাগছে। মানুষ এতো লোভী কেনো? এইসব অতিলোভী মানুষ আর মা- বাবাকে দেবতার আসনে বসিয়ে দেয়া সমাজকে আমি আসলেই ঘৃণা না করে পারি না। ছিহ্‌।

No comments:

Post a Comment