Thursday, April 24, 2014

দুধের বিকল্প সয়াদুধ

গরুর দুধের চমৎকার বিকল্প হতে পারে সয়াদুধ। এতে আছে দুধের সব পুষ্টি-উপাদান। আপনিও নামতে পারেন সয়াদুধ উৎপাদনের ব্যবসায়। বিস্তারিত জানাচ্ছেন মাহতাব হোসেন,

সয়াদুধ উৎপাদনের মেশিন আমদানি করতে হয় জার্মানি থেকে।

দেশের চাহিদা মেটাতে পারে না দেশীয়ভাবে উৎপাদিত গরুর দুধ। এ ঘাটতি অনেকাংশেই মেটানো সম্ভব সয়াদুধ উৎপাদন করে। ব্যবসা হিসেবেও সয়াদুধ উৎপাদন হতে পারে চমৎকার একটি উদ্যোগ। বাজারে এক লিটার গরুর দুধের দাম ৪০ থেকে ৭০ টাকা। সেখানে প্রতি লিটার সয়াদুধ উৎপাদন খরচ মাত্র ৮-১০ টাকা।

শুরুর প্রক্রিয়া

সয়া শস্যকে কাইয়ে রূপান্তর করার মেশিন এখনো দেশে তৈরি হয়নি। আমদানি করতে হয় জার্মানি থেকে। মেশিনের মাধ্যমে অল্প সময়ে প্রচুর দুধ উৎপাদন সম্ভব। এ ক্ষেত্রে পুঁজি লাগে বেশি। তবে মেশিন ছাড়াও সয়াদুধ তৈরি করা সম্ভব। এ ক্ষেত্রে ব্লেন্ডার, শিলপাটার সাহায্যে কিংবা স্থানীয় পদ্ধতিতে সয়া গুঁড়ো করতে হবে।

পুঁজি কেমন

ছোট পরিসরে ২৫ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়েই শুরু করা সম্ভব। তবে এ ব্যবসা জোরেশোরে শুরু করতে চাইলে বিনিয়োগ করতে হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। মেশিনের দাম প্রায় ১২ লাখ টাকা।

কাঁচামাল পাবেন কোথায়

বাংলাদেশে সব ধরনের মাটিতে সয়া চাষ করা যায়। তবে কুষ্টিয়া, যশোর অঞ্চলে সয়ার আবাদ ভালো হয়। চাঁদপুরের হাইমচর উপজেলার সয়া ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, সারা বছরই দেশের বিভিন্ন জায়গায় সয়া সরবরাহ করেন তিনি। কম-বেশি সব স্থানীয় বাজারে সয়া পাওয়া যায়। তবে বীজ সংগ্রহ করে নিজেই চাষ করতে পারলে লাভ বেশি। পলি ও দোআঁশ মাটি সবচেয়ে উপযুক্ত। মধ্য ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সয়া চাষ করা যায়। এপ্রিলে সয়া ফসল ঘরে তোলা হয়। একরপ্রতি লাগে ১২ থেকে ১৬ কেজি বীজ।

আরো অনেক কিছু

গরুর দুধের মতো সয়াদুধ দিয়েও শৌখিন সব ধরনের খাদ্য তৈরি করা যায়। চায়ের মধ্যে অনায়াসেই সয়াদুধ ব্যবহার করা যাবে। এই দুধে দই পর্যন্ত বানিয়েছেন ঝিকরগাছা উপজেলার লাউজানী গ্রামের ডা. সাইদুল ইসলাম। তিনি জানান, গরুর দুধের নিয়মেই সয়াদুধ দিয়ে দই বানিয়েছেন। স্বাদে ও বর্ণে কোনো পার্থক্য নেই। সয়াদুধ দিয়ে দই, রসগোল্লা, সন্দেশ, রসমালাইও তৈরি করা সম্ভব।

সয়াদুধের সম্ভাবনা

ড. নূরুল ইসলাম জানান, দেশে গুঁড়োদুধ 'সয়ামিল' আমদানি করা হয় ফ্রান্স থেকে। আমাদের দেশে এর বেশ চাহিদা আছে। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎকরা অনেকেই এটি খাওয়ার পরামর্শ দেন। দেশে এখনো তেমনভাবে সয়াদুধের কারখানা গড়ে ওঠেনি। তবে ব্যক্তিগত ও বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে সয়াদুধ উৎপাদন শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে যশোরের শার্শা উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে সয়াদুধ উৎপাদন করা হচ্ছে। বান্দরবানের লামায় কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন সয়াদুধ তৈরির কারখানা স্থাপন করেছে। গাজীপুরেও গড়ে উঠেছে ছোট-বড় বেশ কিছু সয়াদুধের কারখানা। সয়াদুধ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানি করা যেতে পারে বাইরের দেশেও।

ক্রেতা কারা হবে, নির্ভর করবে আপনার ওপর। প্রথমে স্থানীয়ভাবে প্রচারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। দিন দিন সয়াদুধের চাহিদা বাড়ছে। স্থানীয় মার্কেট, হাটবাজার, রেস্তোরাঁয় সয়াদুধ সরবরাহ করছে অনেক ব্যবসায়ী।

উপকারী দিক

টেক্সাস উইমেন্স ইউনিভার্সিটি ইনস্টিটিউট অব হেলথ সায়েন্সেস হাইটন সেন্টারের চিকিৎসক জন যার্ডেলিফ এক স্বাস্থ্যবার্তায় বলেছেন, 'যারা নিরামিষভোগী বা গরুর দুধে যাদের অ্যালার্জি আছে, তারা সয়াদুধ খেতে পারে। এর স্বাদ ভালো। হাড় গঠন ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপাদান ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি এই দুধে পাওয়া যায়। এ ছাড়া সয়া ডায়াবেটিক রোগীদের সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতেও যথেষ্ট সহায়তা করে।'

জানাতে হবে সয়াদুধ কী

'গাজীপুরের রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ী সাইদুল ইসলাম তাঁর দোকানে পরীক্ষামূলকভাবে সয়াদুধের মিষ্টি তৈরি শুরু করেছিলেন। এখন চায়েও সয়াদুধ ব্যবহার করছেন। এটা গরুর দুধের চেয়ে সাশ্রয়ী, গ্রাহকরাও সানন্দে গ্রহণ করছেন', বলেন তিনি।

যশোরের শার্শা উপজেলায় সয়াদুধের বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করেছে জাপান-বাংলাদেশ কালচারাল অ্যাসোসিয়েশন। সংস্থার মহাদেব চন্দ্র বসু জানান, এই ব্যবসা শুরু করতে চাইলে প্রথমে সয়াদুধ কী- এটা মানুষকে বোঝাতে হবে। বাজারে চাহিদা তৈরি করতে হবে। তিনি বলেন, 'সয়াদুধ উৎপাদন করে আমরা স্থানীয়ভাবে ব্যাপক সাড়া ফেলতে সক্ষম হয়েছি। এর জন্য আমাদের প্রচার চালাতে হয়েছে। এই এলাকায় এখন মানুষ সয়াদুধের উপকারিতা বোঝে।'

আয় কেমন

ব্যবসায়ীরা জানান, ৩৪ লিটার দুধ তৈরিতে সয়া লাগে চার কেজি। প্রতি কেজির দাম সর্বোচ্চ ৮০ টাকা হিসেবে চার কেজির দাম ৩২০ টাকা। সয়াদুধ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা যাবে। শুরুতে মাসে ১৫ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ব্যবসার প্রসারের সঙ্গে বাড়বে আয়।


No comments:

Post a Comment