ভূমিকা না রেখেই শুরু করছি এ লেখা, কারণ উপরোল্লেখিত বিষয় সম্পর্কে ইতোমধ্যেই সব ধরনের তথ্য সবার কাছে পৌছে গেছে। তাই এই প্রবন্ধটির উদ্দেশ্য, বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের সিদ্ধান্ত কতোটুকু যৌক্তিক তা পর্যালোচনা করা। যাই হোক, প্রথমত এটা দেখবার বিষয় যে কোন দেশের কোন বোর্ডের কোন অংশের সাথে উগ্র বাক্যবিনিময় করবার জন্য পৃথিবীতে আর কেউ এতো বড় শাস্তি পেয়েছে কি না।
দ্বিতীয়ত, এটা বলবার অপেক্ষা রাখে না যে সাকিব আল হাসানের কিছু একটা শাস্তি প্রাপ্য ছিলই, যেমন ৫- ৬ ম্যাচ না খেলতে পারার নিষেধাজ্ঞা সাথে আর্থিক জরিমানা। কিন্তু, সে যখন শেষ পর্যন্ত বিসিবি ডাক দেয়ার পর চলে এলো তাদের প্রতি সম্মান দেখিয়ে, সেক্ষেত্রে বিসিবি তার দেয়া সম্মানটুকু না বুঝতে পেরে ভুল করে বসলো, ৬ মাসের দেশীয়ক্ষেত্রে এবং ১.৫ বছরের জন্য আন্তর্জাতিক ক্রিকেট লীগ খেলা নিয়ে তার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা নিয়ে।
এমন এক সিদ্ধান্তে মনে হচ্ছে, বিসিবি এর কোন এক মহল সাকিব আল হাসানের উপর ইর্ষান্বিত তার দিনের পর দিন ভাল ক্রিকেটীয় পার্ফর্মেন্স নিয়ে, নাহলে তার ক্যারিয়ার এবং একইসাথে আয়ের উৎস বন্ধ করে দিবার এহেন ঘৃণ্য সিদ্ধান্ত নেবার মানে কোথায়? এধরনের শাস্তি দেয়া হয় ম্যাচ ফিক্সিং বা অবৈধ কোন লেনদেন করে থাকলে, কই সে তো এমন কিছু করে নি।
সাকিব আল হাসান এর যে যোগ্যতা, শুধু সাকিব-ই না, মুশফিক, তামিম, মাশরাফি এদের যে যোগ্যতা এরা ভবিষ্যতে হাতুরাসিংহে থেকেও ভাল কোচ হবার সম্ভাবনা রাখে, কারণ এদের সবার ক্যারিয়ারের অভিজ্ঞতা এই নব্য কোচ থেকে হাজার গুণে বেশি। তো সেই কোচের সাথে সাকিব এর বিতর্কের উৎস হলো ক্যারিবীয় ক্রিকেট লীগে খেলা নিয়ে। সাকিবের বক্তব্য ছিল সেখানেই যেহেতু খেলা হবে সামনে বাংলাদেশের, তাহলে সে এখনই খেলে সেই কন্ডিশনের সাথে খাপ নিয়ে নিচ্ছে- এটা তো আসলেই কোন ভুল কথা না। আমি তো বরং বলবো, কোচেরই ইগো সমস্যা রয়েছে, কারণ তার ঘা লেগেছে যে কেন তার অনুশীলনের পুরোটাই সাকিব আসবে না।
এই যে বিশ্বকাপ ফুটবল ২০১৪ হচ্ছে, সেখানে একেকেটা দল বিশ্বকাপ শুরু হবার মাসখানেক আগে গিয়েই কোটি কোটি টাকা খরচ করে স্টেডিয়াম, বাংলো ইত্যাদি ভাড়া করে নিয়ে সেই দেশের কন্ডিশনের সাথে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের সেই অর্থ নেই সেই ধরনের বন্দোবস্ত প্রতি সিরিজের আগের করার। সেইক্ষেত্রে, সাকিবের ব্যাক্তি উদ্যোগে সেখানে খেলা, সেখানে খাপ খাওয়ানো, আবার কিছু অর্থ উপার্জন করাকে নেগেটিভ্লি না দেখে বরং পজিটিভি্ করেই দেখা উচিত ছিল, কারণ আমরা তখন সিরিজ শুরু হবার আগে এমন একজনকে পেতাম, যে ক্যারিবীয় কন্ডিশন সম্পূর্ণ জানে। এতে করে বাকি সব প্লেয়াররাও উৎসাহিত হতো, তারাও অভিজ্ঞতা থেকে নতুন কিছু শিখতো। নব্য কোচই বরং সাকিবের ওখানে খেলা নিয়ে বিরোধিতা করে এই জিনিষটা থেকে বাংলাদেশের সব ক্রিকেটারকে বঞ্চিত করলেন।
কয়দিন আগেই মাত্র, ভারতের এক টিভি চ্যানেল ২২ কোটি বাঙালির মাঝে ক্রীড়া ক্ষেত্রে সেরা বাঙালি হিসেবে সাকিব আল হাসানকে পুরস্কৃত করে, এটা বাংলাদেশি হিসেবে গর্ব করবার মতো। বাংলাদেশের আর কোন খেলোয়াড় নেই, যে একইসাথে ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ্ এর ঘরোয়া এবং অভিজাত ক্রিকেট লীগ খেলে। সাকিব এখন শুধু একজন ক্রিকেটার নয়, সে এখন বাংলাদেশের ব্র্যান্ড ইমেজ্ ও। সৎভাবে তার ব্যাক্তি আয় রুদ্ধ করবার মতো কোন কাজ কোন ধরনের কর্তৃপক্ষই সংরক্ষণ করে না, এটা ব্যাক্তির মৌলিক অধিকার পরিপন্থী।
শেষে এসে একটা কথা বলি, জাত খেলোয়াড়দের চিনে নিতে হয়। এই কয়দিন আগে এশিয়া কাপের ভারতীয় দলের অনুশীলনে ভিরাট কোহ্লি ছিলই না, সে সিঙ্গাপুর থেকে আনন্দ ভ্রমণ করে এসে এখানে খেললো, এবং ভালই খেললো। কই ভারত তো কোন নিষেধাজ্ঞা দিল না তার উপর, কারণ তারা জাত খেলোয়াড় কি তা চিনে, কোচিং- ফোচিং, স্পেশাল ট্রেনিং তার জন্য যার আসলে সেটা দরকার, যার এমনিতেই সব আছে, সে সমস্যায় না পড়লে কেন এসবের দ্বারস্থ হবে?
শৃঙ্খলাভঙ্গের কথাতেও যদি আসি, পাকিস্তানে প্রায় প্রত্যেকটা ক্রিকেট খেলোয়াড়ে তাতে পুরোপুরি নিমজ্জিত, কই তারা তো এভাবে খেলোয়াড়দের জীবন নষ্ট করে দেবার মতো কোন সিদ্ধান্ত নেয় না, বড়জোর ৪-৫ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রাখে।
তো একমাত্র আমরাই সেই জাতীয় ক্রিকেট বোর্ড লালন করছি, যারা পান থেকে চুন খসলেই খেলোয়াড়দের জীবন নষ্ট করে দেবার মতো সিদ্ধান্ত নেয়। যারা এই সিদ্ধান্ত নিলো, তাদের বিরুদ্ধেও অভিযোগ আছে, তারা শেষ টি-২০ বিশ্বকাপের প্রচুর টাকা আত্মসাৎ করেছেন, কই তাদের বিরুদ্ধে তো কোন এক্শন্ নিতে দেখলাম না বোর্ডকে। তারা সবে মিলে চোরে চোরে মাসতুতো ভাই বলেই কি এমন?
আশরাফুলকে দোষী সাব্যস্ত এবং দন্ডিত করবার মাধ্যমে এটা প্রমাণ করা হয়েছিল একমাত্র বাংলাদেশিরা অবৈধভাবে ম্যাচ্ ফিক্সিং করে টাকা নেয়, ভারতীয়রা, পাকিস্তানিরা নেয় না, তাই তাদের বিরুদ্ধে কোন আঙুলও উঠে না, অথচ বেশিরভাগ বাজিকরদের জায়গা এ দুটি দেশেই। যেখানে নরক, সেখানে শয়তানের নির্বাসন হওয়ার কথা, বাজিকরের দেশেই গণহারে ম্যাচ ফিক্সিং হবার কথা নয় কি?
আশরাফুল থেকে সাকিব, সবার প্রতি বোর্ডের অবস্থান দেখে মনে হয়, তারা ব্যাক্তি আক্রোশ মিটিয়েছেন কোন প্রত্যাশিত সুযোগ হাতে পেয়ে। এদিকে দেশের ক্রিকেট আরও একবার ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অবিলম্বে বাংলাদেশের ক্রিকেটের এই ক্ষতি এবং বাইরে ইমেজ্ পুনোরুদ্ধারের জন্য সাকিবের উপর থেকে এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হোক, অনভিজ্ঞ বাইরের কোচ হাতুরাসিংহের চেয়ে দেশীয় একজন আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিকে সম্মান দেখানো হোক। বাংলাদেশের ক্রিকেট বোর্ডের কাছে আমাদের, বাংলাদেশের নাগরিকদের প্রত্যাশা এখন এটুকুই।
লেখকঃ ইনামুল হাফিজ লতিফী, শিক্ষানবিশ, অর্থনীতি বিভাগ, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ লেখাটি ইতোমধ্যে নিম্নোক্ত ওয়েবসাইটে প্রকাশিত হয়েছে, চাইলে যে কেউ ওগুলোয় গিয়েও পড়ে নিতে পারেন। ধন্যবাদ।
১) http://www.sylhetview24.com/news/details/Feature/9512
৩) http://bdn24x7.com/?p=195925
৪) http://goo.gl/pqUbvl
৫) http://www.newsevent24.com/2014/07/08/readers-gallery/141739
৬) http://www.manchitronews.com/moktokolam/details/54
No comments:
Post a Comment