Tuesday, October 18, 2016

আমরা মিথ্যাতে সন্তুষ্ট, আমরা মানসিক-দৈন্যতার জ্বলন্ত প্রতীক!




আসুন, একটু মজা নেয়া যাক!
১) 'আনন্দবাজার পত্রিকা' এর একটি খবরের শিরোনাম 'বাংলাদেশ-রাশিয়ায় যাতায়াত ভিসা ছাড়াই', (https://goo.gl/tKI9hw) তো বেশিরভাগ মানুষ এই শিরোনাম দেখে, আর কিছু মানুষ ঐ পত্রিকাটির ভিতরের রসে ভরা অপ্রাসঙ্গিক কথা পড়ে ধরেই নিলো এখন থেকে মালয়শিয়া, থাইল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়াতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমূদ্র পার হবার আর কোন কারণই থাকলো না, পা বাড়ালেই তো এখন 'রাশিয়া'। ধূমাইয়্যা সেই খবর শেয়ার হইলো, অনেকে ব্যাপক সন্তুষ্টিতে নিদ্রার মাঝে 'রাশিয়া' এর সুন্দরীদের সাথে কয়েকটা ডিস্টিং ডিস্টিং রোমান্সও করে নিলো। হোয়াটএভার, মদ্দা কথা হলো, এই 'ভিসা ফ্রি ট্রাভেল' সুযোগটি এখন পর্যন্ত দেয়া হয়েছে শুধুমাত্র কূটনৈতিক এবং অফিশিয়াল পাসপোর্টধারীদের জন্য (https://goo.gl/x3NzMt)। সাধারণ মানুষেরই বা দোষ কি! তাদের তো বোকা বানিয়েছে খোদ আমাদের দেশের মিডিয়ারই একটা বড় অংশ। হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া বাকি সবগুলো দৈনিক এবং অনইলাই পত্রিকাই 'আনন্দবাজার পত্রিকা'-কে উদ্ধৃত করে মনের মাধুরী মিশিয়ে খবর প্রকাশ করেছে (https://goo.gl/J7mlV5) । কেউ আর সেখানে খোঁজ নিলো না, ঠিক যেখান থেকে নেয়া দরকার। সাংবাদিকতার একটি নির্মল প্রদর্শন বুঝি একেই বলে! ২) 'কালের কন্ঠ' আজ খুব সুন্দর (!) একট খবর করেছে, যার শিরোনাম 'চীনা নাগরিকের ওপর বেপরোয়া পুলিশঃ হাত জোড় করে ক্ষমা, তবু হেনস্তা' (https://goo.gl/r6Sp5G)। খবরটির আদ্যোপান্ত পড়ে আপনার মনে হবে, 'আহারে বাঙ্গালি জাতি, চীনারা তোরে এই কয়দিন আইসা এতোগুলা টাকা দান কইরা যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়া গেলো, আর তুই কিনা এই ফরেনগুলারে এমনে সরম দেস্‌, তাগোরে তো মাথায় উঠাইয়্যা রাখা দরকার।' প্রসঙ্গত, এদেশের সাংবাদিক থেকে শুরু করে আপামর জনগণ, বিদেশি বিনিয়োগ এবং ঋণকেও কোন এক অজানা কারণে 'দান' এবং 'করুণা' হিসাবে গ্রহণ করে। তারা এখনো ভাবতেই পারে না যে, বিনিয়োগ মানে 'লাভ' আর 'ঋণ' মানে হাজারটা শর্ত দিয়ে মূলত সেই ঋণদাতা দেশের 'চাকুরির-শ্রম বাজার' চাঙ্গা করার একটি সুন্দর কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। যাই হোক, দৈনিক 'কালের কন্ঠ' এর নিউজটি ওপেন করে যখন এর ভিতরে দেয়া ছবিটি জুম করে দেখলাম, তখন দেখা গেলো- চীনা সেই ভদ্রলোকটি আঙুল উঁচিয়ে কথা বলছেন আর তার পাশে থাকা পুলিশ সেটি নামিয়ে দিচ্ছেন, হাত জোড় করে ক্ষমা চাওয়ার কোন লক্ষ্মণ সেখানে দেখা গেলো না। অথচ ছবিটির ক্যাপশনঃ "চালকের ভুলের জন্য হাইওয়ে পুলিশের কাছে ক্ষমা চাইছেন প্রাইভেট কারের যাত্রী এই চীনা নাগরিক। তবু মেলেনি নিস্তার। ছবিটি গতকাল কক্সবাজারের লিংক রোড থেকে তোলা।"


ডান হাতের আঙুল উঁচিয়ে কথা বলার মাধ্যমে আর যাই হোক, ক্ষমা চাওয়া হয়না, এটি বুঝতে প্রতিবেদকে অথবা ফটোগ্রাফারের সমস্যা হয়ে থাকলে কোন 'বডি-ল্যাঙ্গুয়েজ' এক্সপার্টের কাছে আগে ২-১ দিন প্রশিক্ষণ নেয়া প্রয়োজন বৈ কি! নাহলে আবার, 'দাসত্বের' মানসিকতা থেকে এরকম প্রতিবেদন হরহামেশা মগজ-ফুঁড়ে বের হয়ে আসা খুব একটা অপ্রত্যাশিত নয়! ৩) এবার আসি বাংলাদেশে সবচাইতে ক্লাস্‌ড-এলিট দৈনিক পত্রিকা হিসেবে খ্যাত 'প্রথম আলো' একটি 'মতামত' পাতায় (https://goo.gl/y4s50R, https://goo.gl/WwDjMt); ১৬ অক্টোবর, ২০১৬ তে প্রকাশিত হয়। 'রিচার্ড হোরসে' নাম ব্যবহার করে অনুবাদকৃত এই লেখাটির শিরোনাম তারা দিয়েছে 'সু চির প্রচেষ্টা ব্যহত হবেঃ রাখাইন প্রদেশে হামলা'। লেখাটি পড়তে গিয়ে কয়েকটা জায়গায় খটকা লাগায় খোঁজ নিলাম Mr. Richard Horsey এর ব্যাপারে। পেশাগতভাবে তিনি Consultant, International Crisis Group, Myanmar, তার টুইটার একাউন্ট (https://twitter.com/rshorsey) ঘেটে জানলাম, ভদ্রলোক একজন Independent political analyst ও বটে। তো বেচারা সম্পর্কে মোটামোটি ধারণা নিয়ে গেলাম খুঁজতে ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের অরিজিনাল কমেন্টারিতে যেখানে Mr. Richard Horsey শিরোনাম দিয়েছেন, 'Myanmar Border Attacks Fuel Tensions with Rohingya Muslim Minority' (https://goo.gl/nQxaOU), যেখানে প্রথম আলোর অনূদিত ভার্সনের শিরোনাম 'সু চির প্রচেষ্টা ব্যহত হবেঃ রাখাইন প্রদেশে হামলা' (এটি কিভাবে উপরোক্ত শিরোনামের ভাবগত অনুবাদ হয়, সেটা আমার কোমল মস্তিষ্কে ঢুকলো না, আপনার কেউ জেনে থাকলে জানাবেন দয়া করে।) অরিজিনাল লেখাটির সাথে প্রথম আলোর ভাবনা-প্রসূত এবং অনুবাদ-দাবিকৃত লেখাটির ফারাক বিস্তর, যে কেউ পুরোটা পড়লেই বুঝতে পারবনে, আমি এখানে ২ টি উল্লেখ করছি, i. অরিজিনালঃ In May 2016, some 35 armed attackers stormed a security post at a camp for Rohingya refugees in southern Bangladesh just across the border from Maungdaw, killing one camp commander and capturing eleven weapons. The attackers were allegedly led by a Pakistani national, along with others from Myanmar and Bangladesh, with the RSO being implicated, according to the Bangladeshi police. প্রথম আলোঃ ২০১৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশের দক্ষিণের একটি জেলায় ৩৫ জন সশস্ত্র হামলাকারী রোহিঙ্গা শরণার্থীশিবিরের এই নিরাপত্তাচৌকিতে হামলা চালিয়ে একজন কমান্ডারকে হত্যা করে ১১টি অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যায়। অভিযোগ আছে, এই হামলার নেতৃত্বে ছিলেন একজন পাকিস্তানি নাগরিক, যাঁর সঙ্গে কথিত বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গা নাগরিকেরাও ছিলেন। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনকেও অভিযুক্ত করা হয়। খুব সূক্ষ্মভাবে, বাংলাদেশি পুলিশই যে এই তথ্যটার সোর্স তা প্রথম আলো এড়িয়ে গেছে। আর 'Others from Myanmar' এর অনুবাদ করেছে 'রোহিঙ্গা নাগরিক দিয়ে'। তাহলে তো, 'বাংলাদেশি' মাত্রই বাইরের মিডিয়ার কাছে 'জঙ্গি আর সন্ত্রাসী'- প্রথম আলোর স্টাইলে। ii. প্রথম আলোর ভার্সনে এই প্যারাটি পুরোপুরি গায়েব করে দেয়া হয়েছে, "According to a local Rohingya leader who claimed to be one of the leaders of this effort, whom Crisis Group met with in 2014, their aim was not separatist, anti-Buddhist or jihadi in nature; rather, it was for their community to live as citizens of Myanmar with their rights respected by the state. The objective was to reconstitute the RSO as an insurgent force focused on attacking the state security apparatus (police, border police and military). Crisis Group interviews at the time suggested there was a modicum of support for this among some members of the population, who saw it as the only path left open to them. But most of the population was and still is opposed to violent resistance." কারণ এটা থাকলে প্রথম আলোর কোন কিছু একটা প্রমাণ করা বাঁধাগ্রস্ত হয়। বাইয় দ্যা ওয়ে, প্রথম আলোর এই ক্রিপল্ড্‌ অনুবাদ কে করেছে তাও প্রকাশ করা হয়নি। Mr. Richard Horsey টেম্পারড্‌ এই লেখাটি নিয়ে কতটুকু সন্তুষ্ট তা আবার ইংরেজীতে অনুবাদ করে তাকে পাঠিয়ে জেনে নিলে ভালই লাগতো!

মোদ্দা কথা হলো, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ দাদাভাই সেই কবেই বলে গিয়েছিলেন,


কবিগুরু থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে আমিও ভাবি,


No comments:

Post a Comment