Thursday, April 17, 2014

সেন্ট মার্টিনের ঘটনা নিয়ে মিডিয়ার যত মিথ্যাচার এবং ভুলভ্রান্তিঃ জাওদাত রহমান এর বক্তব্য



আহসানউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছয় জন ছাত্রের করুন মৃত্যু নিয়ে জাওদাত রহমান ফেসবুকে একটি পোস্ট করেছেন তিনি ওই ৩৪ জনের দলে ছিলেন, এবং মৃত্যুমুখ থেকে বেচে এসেছেন তার লেখায় মিডিয়ায় বিভিন্ন রকমের ভুল প্রচারের ব্যাখ্যা তুলে ধরা হয়েছে পাঠকদেরকে সঠিক তথ্য পরিবেশনার জন্য ওই পোষ্টটি এখানে হুবহু প্রকাশ করা হলো

অনেক পেপারে, খবরের চ্যানেলে অনেক সংবাদ দেয়ার পরও আমার কথা প্রকাশ করা হয় নি! সত্যটাকে বার বার ঘোলাটে করা হচ্ছে ধিক্কার বাংলাদেশের সংবাদ পত্র, টিভি চ্যানেল , পুরো মিডিয়া আর সেই সকল মানুষ কে যারা না জেনেই নিজের মতামত দিয়ে ফেইসবুকে বিভ্রান্ত সৃষ্টি করছেন!

প্রথমেই বলে নেই যেই ছবি টা শেয়ার করে সবাই মৃত্যুর ফাদ সনাক্ত করছেন এখানে লাল মার্ক করা জায়গার আশে পাশেও আমরা ছিলাম না! এর অনেক বামে উত্তর বীচের নীল চিহ্নিত অংশেই আমাদের সবাই ছিল! (উপরের ছবিটি দেখুন)
 বিপদজনক সম্পূর্ণ জায়গাটুকু শেয়ার করলেই তবে আরেকটা জীবন বাচতে পারবেন শেয়ার করার আগে একটু জেনে পড়ে শেয়ার করুন

তখনও আমি বন্ধুর দেহগুলো জীবিত কি মৃত এটাও সিউর হতে পারিনি আমাকে একুশে টিভি থেকে ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস করলঘটনা কি একটু খুলে বলুন”, হাতে বন্ধুর লাশটাকে মাত্র স্পিড বোর্ড থেকে নামালাম মানবতাকর্মী ফোনে জিজ্ঞেস করলকেমন লাগছে আপনার”? এই ছিল বাংলাদেশ এর মানবতা কর্মী এবং সাংবাদিকদের মানবতার অবস্থা! যাই হোক মেনে নিলাম তারা তাদের কাজ করছিল এটা করার জন্যই তাদের পারিশ্রমিক দেয়া হয় তবে প্রশ্ন করারও একটা গাইড বুক থাকা উচিৎ তাই না?
তাহলে যেই কাজটার জন্য আপনাদের রাখা হয়েছে ওই কাজটা তো আপনারা ঠিক মত করবেন! মানুষদের সঠিক তথ্য দেয়া তো আপনাদের কর্তব্য তাই না! ফেসবুক/সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ভুল খবর প্রচারিত হতেই পারে; কারণ এই খবরটি দেয়া তার পেশা নয়! এই খবর মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য তাদের রাখা হয় নি! আপনারা কেন মিথ্যা সংবাদ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করবেন!

সংবাদ পত্র এবং মানুষের ছড়ানো কিছু মিথ্যা সংবাদগুলোর কিছুটা বললাম কারণ সংখ্যায় এতই বেশি ছিল যে এর সব গুলো বলাও সম্ভব না! প্রথমে ইন্ডিপেনডেন্ট টিভিতে বলা হয়, কোস্ট গার্ড বার বার মানা করার পরেও, সঙ্কেত দেয়ার পরও ছেলেরা পানিতে লাফালাফি করছিল এবং অনেক দুরে চলে যায়

যেখানে ওই সময় সেখানে কোন কোস্ট গার্ডই ছিলনা একজন কোস্ট গার্ডও ঘটনা স্থলে অথবা ঘটনা ঘটার ১০-১৫ মিনিট এর সময় ব্যাবধানে থাকলেও আমাদের একটি প্রাণও যেত না। এটিএন বাংলা-তে বলা হয়েছে, ঘটনা স্থলে লাল পতাকা দেয়া ছিল ছেলেরা তা খেয়াল করে নি

কিন্তু সত্য হল লাল পতাকা দেয়া হয়েছে আমাদের জন এর মৃত দেহ পাওয়ার পর এবং জন নিখোঁজ হয়ার পর আমাদেরই চাপে, আমাদেরই বলাবলির পর, পরের দিন রোজ ১৫ এপ্রিল সকাল ঘটিকায় (নিশ্চিত করতে স্থানীয়দের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন)

জনৈক বুদ্ধিজীবী প্রশ্ন তুলেছেনশিক্ষা সফরে শিক্ষক নেই কেন?”

এটা কোন শিক্ষা সফর ছিল না আমরা গত এপ্রিল আমাদের ভার্সিটি জীবনের অধ্যায় শেষ করি আমাদের শেষ পরীক্ষা দেয়ার মাধ্যমে আগেই প্ল্যান ছিল সবাই মিলে ঘুরতে যাব সেন্ট মার্টিন ২৩-২৪ বছরের ভার্সিটি পাশ ছেলেদের এই ঘুরতে আসায় শিক্ষক বা গার্জিয়ানদের টেনে এনে কেন আসল ব্যাপারটা ঘোলাটে করা হচ্ছে? আঙ্গুল তুলতেই যদি হয় আসল খবরে আঙ্গুল তুলুন!

মাত্রই তীরে ভিড়ানো ফারহান শোভন আর আশিফ মজতুবা তখন মাটিতে শুয়ে আছে তখন তাদের ছবি তুলে ছাপানো হল এরা মারা গেছেএই হচ্ছে আমাদের দেশের সংবাদপত্র আর সাংবাদিকতার নমুনা? মানুষের মৃত্যু নিয়ে অন্ততঃ একটু গুরুত্বের সাথে লিখুন

লাশ সনাক্ত করার জন্য আমাদের ছবি দেয়া হল; আমরা তখনও লাশ সনাক্ত করে বলিও নাই; এর আগেই সকল খবরের চ্যানেল বলে দিল এটা সাব্বির হাসান-এর লাশ

লাশ টা ছিল শাহরিয়ার নোমান এর না জেনে এভাবে সকল খবরের চ্যানেল কিভাবে একটা ভুল সংবাদ প্রচার করতে পারে! কিভাবে ? আমি নিজে মাছরাঙ্গা সহ আরও কিছু টিভি চ্যানেল নিশ্চিত করেছিলাম যে দয়া করে সত্য নাম ছাপান বিভ্রান্ত করার সংবাদ দিবেন না এর পরও ঘন্টা দেড়েক পরে দেখি মাছরাঙ্গাও বাকি সব চ্যানেল এর মত মৃত দেহের নাম দেখাচ্ছে সাব্বির

এত ভয়ঙ্কর একটা এলাকা, স্থানীয়রা পরে আমাদের বলল এই একই এলাকায় প্রতি বছর লোক মারা যায়, বছর খানেক আগে ফ্ল্যাগও নাকি ছিল তাহলে কথায় গেল সেই লাল ফ্ল্যাগ?

বাইরের মানুষ কিভাবে জানবে এইখানে একটা খাদ আছে? প্রসাশন থেকে কোন প্রকার সতর্কতা দেয়া হয়নি হোটেল (sand shore) আমাদের সতর্ক করেনি কেন হোটেল থেকে জানানো হল না, কেন এই রকম জায়গায় একটা সাইনবোর্ড নেই? কেন কোন প্রকার রেস্কিউ টিম নাই,হয়ত ১০ মিনিট পরও একটা রেস্কিউ টিম পেলেও মানুষ গুলি বেচে যেত

লোকাল মানুষ জনকে না বাচালে তারাও মারা যেত অন্তত ১২ জন মানুষ আমরা মারা যেতাম ওখানে

তীরে কোন টিউব ছিল না রেস্কিউ টিউব নেই, কেন তীরের আশে পাশে কোন টিউব থাকবে না এত বড় পর্যটন স্থানে? বলে নেয়া ভাল আমরা এমন কোন তীরে যাই নি যেখানে আমরা একা ছিলাম কিংবা যেখানে সচরাচর মানুষ যায় না উত্তর বিচ বলে ওই জায়গাটাতেই সেন্ট মার্টিনে সবাই বিচে নামে ঘাটির প্রান্তে কেউ নামে না যারা সেন্ট মার্টিন যান, তারা সবাই জানেন তীরে কোন দিকে মানুষ সাতার কাটতে নামে

বন্ধুদের দেহ ভ্যান তুলে সেন্ট মার্টিনে কোন চিকিৎসক বা হাসপাতাল পেলাম না! নুন্যতম প্রাথমিক চিকিৎসা করার মতও কোন সাহায্য পেলাম না হয়তো ওই প্রাথমিক চিকিৎসাটুকু পেলেও কিছু জীবন বাঁচে কেন থাকবে না কোন চিকিৎসা ব্যবস্থাআসল সংবাদ না ছাপিয়ে, মানুষ গুলোর নামও ঠিক মত না ছাপিয়ে ভুল সংবাদ দিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করার আর আমাদের পরিবার আর শিক্ষকদের লাঞ্ছনা দেয়ার অধিকার মিডিয়াকে কে দিয়েছে?

আমাদের দুর্বলতা, আমাদের শিক্ষক, বাবা-মা নিয়ে সবাই কথা বলছে অথচ কেউ প্রসাশনের চরম দুর্বলতা, অবহেলা আর দায়িত্বহীনতা নিয়ে নিউজ দিল না কেউ না গত কয়েক বছরে এই একই জায়গায় ১৪ জন ( আমাদের সহ) ছেলে মারা গেল আর কতটা মায়ের বুক খালি হলে আর কতটা স্বজন হারালে প্রসাশন ব্যাপারটা কে গুরুত্বের সাথে নিবে?

যেই খবর গুলো ছাপালে ভবিষ্যতে মানুষের জীবন বাঁচবে, আর হারাবোনা ছেলে, মেয়ে, সন্তান, ভাই বা বন্ধুকে সেগুলো আগে ছাপান এরপর না হয় আমাদের দোষ, দুর্বলতা, কান্ডজ্ঞ্যানহীনতা নিয়ে কথা বলবেন

আমাদের দোষ তো ছিলই! অবশ্যই আমারা ঘুরা পাগল ছেলেরা সব সময় বাংলাদেশ এর সৌন্দর্যই দেখতে যেতাম, চেতাম! বাংলাদেশ যে ঘুরার জন্য নয়! বাংলাদেশ যে কোন পর্যটন নেই এটা সবার জানা উচিৎ ছিল আমাদের তাহলেই আর হারাতাম না বাপ্পি, সাব্বির, অঙ্কুর, নোমান, ইভান আর উদায়কে

No comments:

Post a Comment